আইপিও কি? কিভাবে বাংলাদেশে আইপিও এর জন্য আবেদন করতে হয়?

বহু দশক থেকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ‘আইপিও’ শব্দটা একটা গুঞ্জন। ডাচদেরকে আপনার সর্বপ্রথম আধুনিক আইপিও’র ক্রেডিটটা দিতে হবে যার মাধ্যমে তারা সাধারণ জনতাকে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শেয়ার অফার করেছিলো। যাহোক চলুন ঢুকে পড়ি মূল আলাপে!

আইপিও আসলে কি?

ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং-কে সংক্ষেপে  আইপিও বলা হয়। বাংলায় একে আমরা ‘প্রাথমিক গণপ্রস্তাব’ বলে অভিহিত করি। আবার অন্যভাবে একে চিহ্নিত করা হয় ‘প্রাইমারী মার্কেট’ হিসেবে। বিনিয়োগে ইচ্ছুক আমজনতার কাছ থেকে পাবলিক শেয়ার মালিকানার ভিত্তিতে একটা কোম্পানির জন্য টাকা উত্তোলন করাকেই আইপিও বলা হয়।

এর মাধ্যমে একটা প্রাইভেট কর্পোরেশান আমজনতাকে শেয়ার অফার করে থাকে যা ঐ কর্পোরেশানকে তার ইকুইটি ক্যাপিটাল বা শেয়ার মূলধন উঠানোর রাস্তা করে দেয়।

আপনি কি জানেন, আইপিও ছাড়া একটা কোম্পানি বা কর্পোরেশানকে নিছক প্রাইভেট হিসেবে গণ্য করা হয়? আসুন আইপিও সংক্রান্ত মূল বিষয়গুলো নিচের পয়েন্টগুলো থেকে বুঝে নেইঃ

▶️ আইপিও’র জন্য কোম্পানিগুলোকে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশানের (এসইসি) শর্ত মেনে চলতে হয়।

▶️ আইপিওকে একটা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাথমিক বিনিয়োগকারীদের জন্য তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের ফুল প্রফিট হিসেবে দেখা যেতে পারে।

▶️ এটা আপনার কোম্পানিকে প্রাইমারী মার্কেটের মাধ্যমে মূলধন ধরে রাখার সুযোগ করে দেয়।

▶️ আইপিও হচ্ছে শেয়ার বিক্রি করে মূলধন বাড়ানোর বা কোনো জরুরী প্রয়োজন মেটাবার চমৎকার এক কৌশল।

▶️ এর জন্য একটা কর্পোরেশান কোনো বিনিয়োগ ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিনিয়োগ ব্যাংকের দায় থাকে ঐ আইপিও’র প্রচার, মূল্য নির্ধারণ, চাহিদা নির্ধারণ, দিনক্ষণ ঠিক করা ইত্যাদির।

কিভাবে বাংলাদেশে আইপিও এর জন্য আবেদন করতে হয়?

আপনি জেনে খুশি হবেন, ২০২১ সাল থেকে শেয়ারবাজারে আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত লটারি পদ্ধতি উঠে গিয়েছে। এক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে শেয়ার বণ্টনের নীতিমালা চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ আবেদন করা মাত্র আপনি শেয়ার পেয়ে যাবেন।

আইপিও-তে আবেদনের জন্য আপনার একটা বিও একাউন্ট থাকা চাই। এ পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনতে চাইলে আপনাকে নির্ধারিত সময়ে ব্রোকার হাউজে অর্থাৎ ঐ একাউন্টে টাকা জমা দিতে হবে। এর জন্য আপনাকে ভরসা করা যায় এমন কোনো ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে বিও একাউন্ট খুলতে হবে এবং সেই একাউন্টের বিপরীতে আবেদন করতে হবে।

আমাদের পুজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশানের (বিএসইসি) ’র সর্বশেষ নিয়ম অনুযায়ী, আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে কোনো কোম্পানির শেয়ারের জন্য আবেদন করতে হলে সেকেন্ডারি মার্কেটে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকাটা আবশ্যক। এও বলে রাখি, পূর্বে মাত্র ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকলেই চলত।

আবার ধরুন, আপনার পরিচিত কোনো প্রবাসী আইপিওতে আবেদন করতে চায়। সেক্ষেত্রে তাকে ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে যেটা কিনা একজন বাংলাদেশী নাগরিকের দ্বিগুণ। আর যেহেতু বর্তমানে আইপিও লটারির পরিবর্তে আনুপাতিক হারে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হয়, ফলে আপনি একজন বিনিয়োগকারি হিসেবে ১০ হাজার টাকার শেয়ারের জন্য চাঁদা জমা দিতে পারবেন।

এটা ডিজিটাল যুগ। আপনি চাই দেশে থাকুন বা বিদেশে, একটা ভালো মানের আপ-টু-ডেট ব্রোকার হাউজ আপনাকে অনলাইনে আবেদনের সুযোগ করে দেবে। সেক্ষেত্রে আপনার সময় এবং শ্রম দুইই বাঁচবে!

আবার ধরুন কোনো কারণে আবেদন করেও আপনি একটা কোম্পানির শেয়ার পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ঐ টাকা আপনার বিও একাউন্টে ফেরত আসতে বড়জোর ২-৩ দিন লাগবে। আর আসামাত্র আপনি সেই অর্থ নতুন করে আইপিও-তে বিনিয়োগ করতে পারবেন।  

আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে ঝুঁকির পরিমাণ প্রায় শূন্য বলে এদেশের বহু তরুণ এতে বিনিয়োগ করে। আপনি তরুণ হোন বা হোন, বুদ্ধিমানের মতো বিনিয়োগ করে মানসিক তারুণ্যের অধিকারী থাকতে পারেন যখন তখন!