বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি বড় পদক্ষেপ, এবং যেটি উপলব্ধ সমস্ত বিকল্পের সাথে অপ্রতিরোধ্য হতে পারে। কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের অনেক সুবিধা রয়েছে যা তাদের অর্থ বাড়াতে চাওয়াদের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত পছন্দ করে তোলে। মিউচুয়াল ফান্ডের সাহায্যে, আপনি পেশাদার ব্যবস্থাপনা, বৈচিত্র্য এবং তারল্য পেতে পারেন, সব কিছু অন্যান্য বিনিয়োগের তুলনায় উচ্চতর রিটার্ন অর্জনের সম্ভাবনা থাকা অবস্থায়।
মিউচুয়ালফান্ড গুলি পেশাদার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হয়। এসব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির দক্ষ গবেষনাদল যথাযথভাবে অর্থনীতি এবং বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তাদের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগকারীর জন্য উপযুক্ত স্টক ও বন্ড সহ অন্যান্য বিনিয়োগখাত নির্ধারণ করে থাকেন। অন্যদিকে, একজন সাধারন বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাজারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে উপযুক্ত স্টক বাছাই করা খুবই কষ্টকর।
কিন্তু একজন অ্যাসেট ম্যানেজার বিনিয়োগকারীদের পক্ষ হয়ে নির্দিষ্ট ফীয়ের বিনিময়ে (সীমিত ঝুঁকি গ্রহণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ লাভ অর্জনের উদ্দেশ্য) ডাইভারসিফাইড পোর্টফলিও তৈরি করেন এবং তার কাঠামো পরিবর্তন (rebalancing) করেন যা বিনিয়োগকারীদের আর্থিক লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে।
মিউচুয়াল ফান্ডের সমস্ত আয় ট্যাক্স-মুক্তি ও ট্যাক্স-রেয়াত সুবিধার অন্তর্ভুক্ত। নিয়মানুসারে, মিউচুয়াল ফান্ডগুলির উপার্জনের একটি নির্দিষ্ট অংশ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ডিভিডেন্ড হিসাবে ভাগ করে দিতে হয়, তার মধ্যে প্রতি বিনিয়োগকারীর জন্য প্রথম২৫,000 টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড আয় ট্যাক্স-মুক্ত আয় বলে বিবেচিত হবে।
অর্থাৎ কোন বিনিয়োগকারী, ১০ টাকায় একটি ওপেন-এন্ড ফান্ডের ইউনিট কিনে ১২ টাকায় অ্যাসেট ম্যানেজারের কাছে বিক্রি বা সমর্পণ করলে যে ২ টাকা লাভ হয় তা ঐ বিনিয়োগকারীর জন্য ট্যাক্স-মুক্ত থাকবে। এছাড়া, বিনিয়োগের পরিমাণের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীরা ট্যাক্স-রেয়াতের সুবিধা পেয়ে থাকেন। ট্যাক্স-রেয়াত সুবিধার ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রদেয় ট্যাক্স হ্রাস পায় যা তাদের ট্যাক্স-লায়বিলিটি উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয়।
মিউচুয়াল ফান্ডকে এক ঝুড়ি ফলের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ধরুন আপনার কাছে ৫০০/- টাকা আছেযা দিয়ে আপনি ফল কিনতে চান। আপনি দুটি কাজ করতে পারেন। হয়, ৫০০/- টাকা দিয়ে একধরনের ফল বেশি কিনতে পারেন অথবা ৫০০/- টাকার ভিতর বিভিন্ন ধরনের ফল অল্প অল্প করে নিতে পারেন। কিন্তু, ৫০০/- টাকা দিয়ে আপনার পক্ষে একাধিক ধরণের ফল কেনা লাভজনক নয়।
এখন আপনার মত ১০ জন ব্যক্তি যদি ৫০০/- টাকা করে দেয়, তবে সবার টাকা একসাথে করে, বিভিন্ন ধরণের ফল কিনে তা সবার মধ্যে ভাগ করে দেয়া সম্ভব। ঠিক একই ভাবে এমন অনেক কোম্পানির শেয়ার আছে যা, যদিও খুব লাভজনক, কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় স্বল্প মূলধন বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ার কিনতে পারেন না।
কিন্তু, এরূপ অনেক বিনিয়োগকারীর মূলধন একত্রিত করা হলে বড় একটি ফান্ড (মিউচুয়াল ফান্ড) গঠিত হয়, যা দিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণীয় খাতের ভালো কোম্পানি সমূহের শেয়ার একইসাথে কেনা সম্ভব হয়। বিভিন্ন খাতের অনেক কোম্পানির শেয়ার একসাথে একই পোর্টফলিওতে থাকে বলে কোন একক খাত বা কোন একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বাজারে কমে গেলেও, পোর্টফলিওর ভ্যালু খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
এভাবে একটি ডাইভারসিফাইড পোর্টফলিও তৈরি করা যায়- যা বিনিয়োগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয়। মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ বিনিয়োগকারীদের আর্থিক প্রয়োজন ও ফান্ডের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন স্টক, বন্ড ও অন্যান্য অনুমোদিত সিকিউরিটিজ গুলিতে বিনিয়োগ করা হয়। তাই এসকল বিনিয়োগকারীর সম্মিলিত বিনিয়োগের ফলে বিনিয়োগের ঝুঁকি কমিয়ে প্রত্যেকে লাভবান হন।
সাধারনত স্টক, বন্ড ইত্যাদির লেনদেন চাহিদা ও যোগানের উপর নির্ভর করে। বিক্রেতার দাম ওক্রেতার দাম সামঞ্জস্য না হলে ক্রয় বিক্রয় হয় না। আবার ফিক্সড ডিপজিট বা সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট সময়ের/ মেয়াদের আগে টাকা তুলে নিতে গেলে বিনিয়োগকারী পূর্বনিরধারিত সুদের হার থেকে বঞ্ছিত হন।
কিন্তু ওপেন-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা যে কোন সময়ে, চলমান নেট-সম্পদ-মূল্যে ইউনিট গুলি কেনাবেচা করতে পারে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, পুজিবাজারে বিনিয়োগ মাত্রই দীর্ঘমেয়াদী এবং মিউচুয়াল ফান্ড-এ দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সাধারণত স্বল্প-মেয়াদীর তুলনায় অধিক লাভ প্রদান করে।