মিউচুয়াল ফান্ড কি?

সহজ ভাবে বলতে গেলে, মিউচুয়াল ফান্ড কাঠামোতে একটি অ্যাসেট ম্যানেজার বা সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ছোট ছোট সঞ্চয় সংগ্রহ করে একটি বড় ফান্ড গঠন করে।

এরপর ওই ফান্ড থেকে সম্পদ ব্যবস্থাপক তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার,অর্থ বাজারের বিভিন্ন পণ্য বা সেবা, সরকারি ও করপোরেট বন্ডে বিনিয়োগ করে। উদ্দেশ্য থাকে ফান্ডটির অর্থ বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করা।

মিউচুয়াল ফান্ড মূলতঃ একটি পৃথক আইনি সত্তা যা ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেই অর্থ বিভিন্ন খাতে ডাইভেরসিফিকেশনের মাধ্যমে ঝুকি কমিয়ে বিনিয়োগ করে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে।

একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ বা সময় শেষে ফান্ডের বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা অর্জিত হয়, তা আনুপাতিক হারে ওই ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। ফলে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী সহজেই তাঁর অল্প বিনিয়োগের বিপরীতে দীর্ঘ মেয়াদে লাভবান হতে পারেন। এ ধরনের সমন্বিত বিনিয়োগের মাধ্যমকে মিউচুয়াল ফান্ড বলা হয়।

মিউচুয়াল ফান্ড কয় ধরনের হয়ে থাকে?

মিউচুয়াল ফান্ড দুই ধরনের হয়ে থাকে: ক্লোজড-এন্ড বামেয়াদী (Closed End) এবং ওপেন-এন্ডেডবা বে-মেয়াদী (Open Ended)।

ক্লোজড-এন্ডফান্ডগুলি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাবদ্ধ এবং বাংলাদেশে দশ বছরের সীমাবদ্ধ মেয়াদ রয়েছে। এই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডগুলি শুধুমাত্র ফান্ড গঠনের সময় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদের শেষে এটি বিনিয়োগকারীদের মূলধন ফেরত দেয়। অর্থাৎ ক্লোজ-এন্ড ফান্ডের ইউনিট সংখ্যা কখনো পরিবর্তন হয় না।

ক্লোজ-এন্ডফান্ডগুলি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত থাকে এবং অন্যান্য তালিকাভুক্ত শেয়ারের মতইএদের কেনাবেচা করা যায়। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা বর্তমান বাজার মূল্যে ক্লোজড-এন্ডফান্ডের ইউনিট গুলো ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে সরাসরি বাজার থেকে কিনতে বা বিক্রয়করতে পারে। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে এসব ইউনিটের বাজারমুল্য নেট-সম্পদ-মান থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে ভিন্ন হতে পারে।

অন্য দিকে ওপেন-এন্ডেড ফান্ড (ইউনিট ফান্ড নামেও পরিচিত) এর নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ মেয়াদ নেই।এরা সময়ের সাথে সাথে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নতুন মূলধন নিতে পারে। যখনই কোন বিনিয়োগকারী ওপেন-এন্ডেড ফান্ডের ইউনিট কিনতে চায়, অ্যাসেট ম্যানেজার ঐ বিনিয়োগকারী প্রদত্ত টাকার বিপরীতে নতুন ইউনিট ইস্যু করে।

ওপেন-এন্ডেড ফান্ড স্টকএক্সচেঞ্জে তালিকাবদ্ধ থাকে না তাই ইউনিট হোল্ডারগণ যেকোনো সময় বিদ্যমান নেট সম্পদমূল্যে (NAV) অ্যাসেট ম্যানেজারের কাছে ইউনিট ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারে।

ওপেন-এন্ডেডফান্ডের ক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারিদের ইউনিট ক্রয় বা বিক্রয়মূল্য নেট সম্পদ মূল্যের(NAV) কাছাকাছি হয় বলে, ক্লোজড-এন্ড ফান্ডের মত এর বাজার মূল্যের ঝুঁকি থাকে না।বর্তমানে বাংলাদেশের সামগ্রিক বাস্তবতায় একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য ওপেন-এন্ডেড বা বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করাটা বেশি লাভজনক।

মিউচুয়ালফান্ড পরিচালনার সঙ্গে তিন ধরনের প্রতিষ্ঠানের সরাসরি যুক্ততা রয়েছে। সেগুলো হলো-

১. বিএসইসিতে নিবন্ধিত ট্রাস্টি বা হেফাজতকারী প্রতিষ্ঠান। যার কাজ হচ্ছে ট্রাস্টচুক্তি অনুযায়ী, ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা।

২. বিএসইসির নিবন্ধিত কাস্টডিয়ান প্রতিষ্ঠান; যার অধীনে নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডেরঝুড়িতে থাকা সব সম্পদ নিরাপদে রাখা।

৩. বিএসইসির নিবন্ধিত সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান। যারা নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডেরঅর্থ যথাযথভাবে বিনিয়োগের দায়িত্ব পালন করে।

বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা ঐ মিউচুয়াল ফান্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষনেট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV) বা প্রকৃত সম্পদমূল্য জানতে পারেন। এ ছাড়া এসেট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান তার কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দুই সপ্তাহ পরপর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে জমা দেয়।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ কোথায় কোথায় বিনিয়োগ করাহয়েছে, চাইলে তা সহজেই জানতে পারবেন। ওই মিউচুয়াল ফান্ডের ত্রৈমাসিক আর্থিক বিবরণীতে বিনিয়োগের সব তথ্য থাকে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে প্রায় ৩৫টি ক্লোজড-এন্ড বা মেয়াদি এবং ৮৩টি ওপেন-এন্ডেড বাবে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড আছে।