বীমা কি একটি বিনিয়োগ পণ্য?

আমরা জানি জীবন বীমা একটি চুক্তি যেখানে বীমাকারী ও বীমা কোম্পানি কিছু শর্ত সাপেক্ষে চুক্তিবদ্ধ হয়। এই চুক্তিতে বীমাকারী একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ নির্ধারিত সময় পর পর বীমা কোম্পানিকে প্রদান করে থাকে।

এই অর্থ বা প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বীমাকারীর মৃত্যু বা জীবনের আশংকা দেখা দিলে ক্ষতিপূরণস্বরুপ প্রদান করে থাকে। আবার বীমাকারীর মৃত্যু না ঘটলেও বীমার মেয়াদপুর্তিতে এককালীনভাবে এই অর্থ পাওয়া যায়। বীমা হতে এই অর্থ প্রাপ্তিকে অনেকেই এক ধরনের বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে।

তবে সত্যি বলতে, এটি একটি বিতর্কিত বিষয়। অনেকেই বীমাকে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে, আবার অনেকেই একে বিনিয়োগ হিসেবে মানতে নারাজ। আজকের লেখায় আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। সঙ্গে আছেন তো?

বীমা এবং বিনিয়োগঃ কেন জট বাঁধানো গাঁট এবং এদের পার্থক্যসমূহ

বিনিয়োগের মতো, বীমা অর্থনৈতিক পরিকল্পনার একটি প্রয়োজনীয় বিষয়। এটি একটি কারণ হতে পারে মানুষ বিনিয়োগ এবং বীমাকে এক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।

একজন বীমাকারী হিসেবে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, বীমা এমন একটি চুক্তি যার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনাকে অনাকাংখিত আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা। অপরদিকে বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, বিনিয়োগ হচ্ছে লাভের আশায় কিছু অর্থ খাটানো যেখান থেকে নির্দিষ্ট সময় পর কিছু মুনাফা অর্জন করার লক্ষ্য থাকে।

জীবন বীমা পলিসি ক্রয় করলে তারা জীবনের ঝুঁকি গ্রহন করে। কোন দুর্ঘটনা বা আপনার অকাল মৃত্যুতে আপনার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। অপরদিকে ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে বা বিনিয়োগ করলে নির্দিষ্ট সময় পরে কিছু মুনাফা প্রদান করে। কিন্তু এই বিনিয়োগের দ্বারা কেউ আপনার জীবনের ঝুঁকি গ্রহন করবে না।

বিনিয়োগের সাথে বীমাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। কারন দুটি জিনিসের উদ্দেশ্যই আলাদা। জীবন বীমা কোম্পানি বীমাগ্রহীতার জীবনের ঝুঁকি গ্রহন করে এবং বিনিয়োগে শুধু আপনার অর্থের নিরাপত্তা আর মুনাফা প্রদান ছাড়া অন্য সুবিধা প্রদান করে না।

সাধারণভাবে বলতে গেলে, বিনিয়োগ এমন একটি পণ্য যেখানে বিনিয়োগকারীর মূল লক্ষ্য সম্পদ বৃদ্ধি। অর্থাৎ বিনিয়োগ থেকে আমাদের প্রত্যাশা থাকে একটি নিয়মিত আয় আসবে, আর্থিক নিরাপত্তা থাকবে, নির্ধারিত সময় পর একটি বড় মুনাফা আসবে প্রভৃতি।

অপরদিকে, বীমা এমন একটি পণ্য যেখানে অর্থের বিনিময়ে আপনার জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা হয়। এখানেও নির্ধারিত সময় পর একটি বড় মুনাফা পাওয়া যায় তবে এর সাথে ঝুঁকির একটি সম্পর্ক রয়েছে। বীমাকারীর মৃত্যুতে তার পরিবার একটি বড় অংকের টাকা পায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে যা তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

বীমার সাথে বিনিয়োগের এখানেই সবচেয়ে বড় একটি পার্থক্য। জীবন বীমা ঝুঁকি গ্রহনের সাথে সাথে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, বিনিয়োগ শুধুমাত্র আর্থিক নিরাপত্তা দেয় কিন্তু জীবনের কোন নিরাপত্তা প্রদান করে না।

বিভ্রান্তির কারণ

বিনিয়োগ ও বীমার মধ্যেকার পার্থক্যটা অস্পষ্ট হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে এ দুটি বিষয় সম্পর্কে যথাযথ আর্থিক জ্ঞানের অভাব। এর যথাযথ উপস্থাপনের অভাবে এদের বৈশিষ্টগত পার্থক্যগুলো আমাদের দৃষ্টিগোচর থেকে যায়। যেমনঃ

বীমা এজেন্টরা যখন বীমার সুযোগ সুবিধা বর্ণনা করেন তখন তারা মেয়াদ শেষে আর্থিক মুনাফা উল্ল্যেখ করেন। একইভাবে বিনিয়োগ  এজেন্টরাও এই মুনাফার উল্ল্যেখ করেন কিন্তু এই মুনাফা শুধুমাত্র মেয়াদ শেষে প্রদেয় হয়ে থাকে। অন্যদিকে জীবন বীমায় এই মুনাফা শুধুমাত্র মেয়াদ শেষে প্রদেয় নয় বীমাকারীর অসুস্থতা বা মৃত্যুতে তার পরিবার বা মনোনীত ব্যক্তিকে এই অর্থ প্রদান করা হয়।

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একজন বিনিয়োগকারীকে বিনিয়োগের পরিমান, মেয়াদ, সুদের হার প্রভৃতি বিষয় বিবাচনা করতে হয়। জীবন বীমায় ঝুঁকির পরিমান, চুক্তির মেয়াদ ইত্যাদি বিষয় বিবাচনা করা হয়ে থাকে।

সুতরাং বলা যায় যে, বীমা ও বিনিয়োগ এক জিনিস নয়। দুটি বিষয়ের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য স্পষ্টত বিদ্যমান।

শেষ কথা

আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে আপনার সংশয় বা ভুল ধারণাটি দূর হয়েছে। এই লেখা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে বীমা ও বিনিয়োগ এক নয়। বীমা ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে কিন্তু এটি কোন বিনিয়োগ পণ্য নয়।